বিশ্বব্যাপী চিপ সংকটের মধ্যেও যেভাবে সফল টয়োটা

News Desk    |    ১১:২৯ এএম, ২০২১-০৩-১০


বিশ্বব্যাপী চিপ সংকটের মধ্যেও যেভাবে সফল টয়োটা

গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে সঠিক সময়ে উৎপাদন আর সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রগামী টয়োটা। কিন্তু মহামারীর বছরে বিশ্বব্যাপী যখন গাড়ি তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিপের মহাসংকট চলছিল, তখনো কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়নি এবং এ সময় তারা দারুণ ব্যবসা করেছে। আসলে মহামারীর বছরে তারা চিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মজুদ করার কৌশল অবলম্বন করে সফল হয়েছে। ২০১১ সালে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর থেকে তারা এ কৌশল অবলম্বন করে আসছে।

২০১১ সালে জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সুনামির সৃষ্টি হয়, যা প্রায় ২২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। ওই সুনামিতে ফুকুশিমার পারমাণবিক পাওয়ার প্লান্টও ধ্বংস হয়। ২০১১ সালের ১১ মার্চের ওই প্রলয়ঙ্করী বিপর্যয়ের পর টয়োটার সরবরাহ চেইন বিচ্ছিন্ন হয়। তখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি উপলব্ধি করে যে এমন সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর টিকে থাকতে চাইলে চিপ কিংবা সেমিকন্ডাক্টরের মতো ডিভাইসগুলো মজুদ করা অত্যন্ত জরুরি।

তখনই বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান (বিসিপি) গ্রহণ করে টয়োটা। এর পর থেকে বিশ্বের যেকোনো কারখানায়ই অর্ডার থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে ছয় মাসের চিপ মজুদ রাখা নিশ্চিত করার নীতি অবলম্বন করে আসছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটি। অন্তত চারটি সূত্র রয়টার্সকে একথা জানিয়েছে।

এ কৌশল কাজে লাগিয়েই করোনাকালীন অন্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় টয়োটা। করোনার সময় মোবাইল, ল্যাপটপ-জাতীয় ডিভাইসের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে গাড়ি কোম্পানিগুলো সেমিকন্ডাক্টর ও চিপ সংকটে পড়ে যায়। এমনও হয়েছে যে চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর সংকটের কারণে অনেক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি উৎপাদনই বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু তখন টয়োটার উৎপাদন আর সরবরাহ কোনোটিই আটকে থাকেনি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গাড়ির অডিও সিস্টেম, ডিসপ্লে আর চালকের সহায়ক প্রযুক্তি স্থাপনে বিশেষজ্ঞ কোম্পানি হারমান ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেছেন, আমরা যতদূর জানি, টয়োটাই একমাত্র কোম্পানি, যারা কিনা চিপ ঘাটতির সংকট সঠিকভাবে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।

বাকি তিন সূত্রের মধ্যে দুজন টয়োটার প্রকৌশলী ও চতুর্থ জন চিপ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

চিপ সংকটের কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হবে না—এমন ঘোষণা দিয়ে গত মাসে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে চমকে দেয় টয়োটা। বিশেষ করে ওই সময় ফক্সওয়াগন, জেনারেল  মোটরস, ফোর্ড, হোন্ডা, স্টেলান্টিসসহ আরো কিছু কোম্পানি চিপ সংকটের কারণে উৎপাদন কমিয়ে দেয় কিংবা পুরোপুরি বন্ধই করে দেয়। অধিকন্তু, টয়োটা এ মাসেই শেষ হতে চলা অর্থবছরে উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং পুরো একটি বছরে তাদের আয় ৫৪ শতাংশ বাড়বে বলে এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

২০১১ সালের ভূমিকম্প আর সুনামির পর মাইক্রোকন্ট্রোলার ইউনিট (এমসিইউ) ও অন্যান্য মাইক্রোচিপ ক্রয়ের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনে টয়োটা। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পর টয়োটা সেমিকন্ডাক্টরের মতো গাড়ি নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মজুদ নিশ্চিত রাখা নিয়ে পরিকল্পনা করে।

বিপর্যয়ের প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে জাপানের বাইরের কারখানাগুলোয় উৎপাদন স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে যেতে অন্তত ছয় মাস লেগে যায় টয়োটার। যদিও বিদেশের কারখানাগুলোর চেয়ে জাপানভিত্তিক কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক করতে তার চেয়ে দুই মাস কম সময় লাগে।

মান ও উত্কর্ষ আর সময়মতো সরবরাহ করার দিক থেকে গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক নম্বরে জায়গা করে নেয় টয়োটা। যদিও ২০১১ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কিছুদিনের জন্য তাদের সেই অবস্থান হুমকিতে পড়ে। এবার করোনা মহামারীতে আগের সেই ভুলটি আর করেনি টয়োটা। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে এবার দুর্যোগ তাদের টলাতে পারেনি।

এমসিইউর নকশা ও উৎপাদনের জন্য ১৯৮৯ সালে একটি সেমিকন্ডাক্টর প্লান্ট করে টয়োটা। ওই সময় চিপ শিল্প থেকে মেধাবী সব প্রকৌশলীকে বাগিয়ে নেয় তারা। সেই থেকে তিন দশক ধরে তারা নিজেদের মতো করে এমসিইউর নকশা করেছে। ২০১৯ সালে এসে তারা চিপ তৈরির প্লান্টটি ডেনসোর কাছে হস্তান্তর করে।