Advertisement
০৯ মে ২০২৪
তবু এর দুর্নিবার আকর্ষণে আবারও ভোটের ময়দানে নামতে রাজি। নতুন ছবি মুক্তির আগে খোলামেলা ব্রাত্য বসু
Bratya Basu

রাজনীতি আমাকে পাল্টে দিয়েছে, বললেন ব্রাত্য বসু

তবু এর দুর্নিবার আকর্ষণে আবারও ভোটের ময়দানে নামতে রাজি। নতুন ছবি মুক্তির আগে খোলামেলা ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু।

ব্রাত্য বসু। ছবি: নিরুপম দত্ত।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

প্র: দশ বছর পরে কী ভেবে ছবি পরিচালনায় ফিরলেন?

উ: এই দশ বছরে প্রতি বছরই ভেবেছি, ছবি পরিচালনা করব। তার পরে যখন পাকাপাকি ভাবে সুযোগ-সুবিধে এল, তখন দেখলাম এক দশক পেরিয়ে গিয়েছে, ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’... (হাসি)।

প্র: ‘ডিকশনারি’তে আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং নুসরত জাহান স্টার ভ্যালু যোগ করলেন?

উ: আমার তো মনে হয়।

প্র: এখনকার সময়ের নিরিখে দাঁড়িয়ে আপনার ছবিতেও স্টারের দরকার রয়েছে?

উ: পৃথিবীতে এমন কোনও পরিচালক নেই, যিনি স্টার বাদ দিয়ে ছবি ভেবেছেন। কোভিড-উত্তর চলচ্চিত্রের যে চেহারা, সেখানে পুঁজি বিষয়টাই সঙ্কটে। এই শিল্পের সঙ্গে লগ্নি ও পুঁজি এমন ভাবে জড়িয়ে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ট্যারান্টিনোর মতো পরিচালকও দু’বার করে ব্র্যাড পিট বা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে নিয়ে ছবি করেন কেন?

প্র: তবে ব্রাত্য বসুর ছবিতে নুসরত জাহানের কাস্টিং দর্শকের মনে কিছুটা হলেও বিস্ময় তৈরি করে...

উ: নুসরত খুব ভাল কাজ করেছে। আসলে অভিনেতা সম্পর্কে যে পারসেপশন, সেটা সামাজিক নির্মাণ। সেই শিল্পীও হয়তো নিজেকে সে ভাবেই দেখাতে চান। কিন্তু সেটার সঙ্গে তাঁর অভিনয়ের সম্পর্ক নেই। নুসরতকে নিয়ে গণমাধ্যমের আগ্রহ রয়েছে, চর্চাও হয়। কিন্তু আমি যখন আবীর ও নুসরতের সঙ্গে কাজ করেছি, তখন তাঁরা শুধুই অভিনেতা, যাঁদের বিপণনযোগ্যতা রয়েছে।

প্র: আপনার স্ত্রী পৌলমী বসুও রয়েছেন ছবিতে। ওঁকে ভেবেই কি চরিত্রটি লেখা?

উ: পৌলমী প্রথমে অভিনেত্রী। আমার স্ত্রীও বটে (হাসি)। আমি আর উজ্জ্বল (চট্টোপাধ্যায়) মিলে যখন চিত্রনাট্য লিখলাম, তখন মনে হল ও-ই সবচেয়ে ভাল করবে।

প্র: বুদ্ধদেব গুহর দু’টি ছোট গল্পের আধারে আপনার এই ছবি। এখনকার দর্শক ছবির সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন বলে মনে হয়?

উ: বাংলায় গত কয়েক বছরে জাঁকিয়ে বসেছে গোয়েন্দা বা বৃদ্ধ মানুষের সমস্যা নিয়ে ছবি। কিন্তু এর বাইরেও মানুষের মৌলিক, তুচ্ছ সুখ-দুঃখের কথা শোনার জন্য বড় দর্শক আছেন। তাঁরা যদি কোভিড-ভীতিকে জয় করে সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখেন, মনে হয় ভাল লাগবে।

প্র: গত কয়েক বছরে যে পরিচালকেরা বাংলায় বেশি কাজ করেছেন, তাঁদের ছবি দেখেছেন?

উ: আমার অভিনীত ছবিগুলো ভালই লাগে। তার বাইরে আমি কম ছবি দেখেছি। আর গত দশ বছরে যে পরিচালকেরা আমার থিয়েটার দেখেননি, তাঁদের ছবিও আমি দেখিনি। সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) ‘গুমনামী’ দেখলাম কয়েক দিন আগে।

প্র: ভাল লেগেছে?

উ: ভাল। তবে এক দোকানের ময়রাকে অন্য দোকানের মিষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করতে নেই (হাসি)।

প্র: ভোটের আগে আপনার পার্টি ছেড়ে প্রধান বিরোধী দলে চলে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে?

উ: কারা থাকছে তা নিয়ে পার্টি ভাবছে, কারা চলে যাচ্ছে তা নিয়ে নয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের দলটি এতটাই এক-ব্যক্তি নির্ভর, সেখানে কে থাকছে না থাকছে, তাতে কিছু আসে যায় না।

প্র: দলে থাকছেন বা ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, কাজ করতে পারছেন না। এই জায়গাটা কেন তৈরি হয়েছে?

উ: গুরুত্ব বা মর্যাদা শব্দটির অর্থ রাজনীতিতে আপেক্ষিক। মুখ্যমন্ত্রী হেসে তাকালেই, কেউ সেটাকে গুরুত্ব মনে করে। কেউ একটা পদ পেলে সেটাকে গুরুত্ব দেয়। কারও কাছে আবার একাধিক পদ হতে হবে। যাঁরা বলছেন, কাজ করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য বলব, আমি তো পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পেরেছি।

প্র: একাধিক ব্যক্তি যখন ক্ষোভ জানাচ্ছেন, সেটা কি দলের সমস্যা না ভোটের হাওয়া?

উ: মনে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা কাজ করছে। কারণ বিজেপির মুখ কে হবেন, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। আর যাঁরা দলবদল করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই হয়তো ভাবছেন সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করে দিতে পারবেন।

প্র: টলিউডের এক তরুণ অভিনেতা আপনাদের পার্টিতে যোগ দিলেন। তার পরে পরেই তাঁর বিরুদ্ধে অশালীনতার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পার্টি কী ভাবছে?

উ: কাউকে নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, তার সঙ্গে রাজনীতির তো সম্পর্ক নেই।

প্র: রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরে তো তাঁর সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে...

উ: ভিডিয়োটি আমি দেখিনি। তাই কোনও ধারণা নেই।

প্র: আপনি এ বার ভোটে দাঁড়াবেন?

উ: ইচ্ছে আছে, যদি টিকিট পাই।

প্র: টিকিট পাবেন?

উ: মনে তো হচ্ছে পাব (হাসি)। দশ বছর সংসদীয় রাজনীতি করে আলাদা উন্মাদনা পেয়েছি।

প্র: পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘শিল্প শেখায়, কী বলা উচিত, রাজনীতি শেখায়, কী বলা উচিত নয়।’’ এই টানাপড়েন ব্যক্তি ব্রাত্য বসুকে এক দশকে কতটা প্রভাবিত করল?

উ: রাজনীতি আমাকে অনেকটা পাল্টে দিয়েছে। আমার প্রগল্‌ভতাকে টিউন করেছে। আমার আত্মবিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসহীনতার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করেছে। নিজের মধ্যে অনন্তকে অনুভব করেছি। আবার যে রহস্যময়তাকে সব সময়ে ছুঁয়ে দেখা যায় না, হিমশৈলের মতো কিছুটা হলেও তাকে ছুঁয়ে দেখেছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Politics Bratya Basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE