Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
Beta
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪

হাইব্রিড বনাম ইলেকট্রিক গাড়ি: কোনদিকে হাঁটছে টয়োটা

toyota hybride

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বছর খানেক আগে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা ব্যাটারিচালিত গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভেহিকেল (ইভি) নির্মাণের ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে টয়োটা পরিবারের উত্তরাধিকার আকিও টয়োডাও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। ১৪ বছর দায়িত্ব পালনের পর সিইও পদ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আকিও টয়োডা বলেছিলেন- “আমি সেকেলে মানুষ”। রূপান্তরের এই যাত্রায় নিজেকে ‘আনফিট’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।  

ইভি উৎপাদনের পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েও টয়োটা জোর দেয় হাইব্রিড গাড়ি নির্মাণে। তাদের যুক্তি- ইলেকট্রিক যানের চাহিদা থাকলেও বাড়েনি চার্জিং স্টেশন। ফলে ক্রেতারা এখনও ইভির জন্য প্রস্তুত নয় বলে মনে করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ফার্মের প্রিন্সিপাল ই-মবিলিটি রিসার্চ অ্যানালিস্ট স্যাম আবুলসামিদের কথায়ও তার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল। তিনি বলেছেন, “সময়ের সাথে সাথে, ইভি আরও উন্নত হবে। তবে চ্যালেঞ্জটি হলো, এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে চাইলেই এগুলো কেনা সম্ভব না”।

সাফল্য হাইব্রিডে

অবশ্য হাইব্রিড গাড়ির সিদ্ধান্তটি দারুণভাবে টয়োটার পক্ষে গেছে। ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলা সব প্রতিদ্বন্দ্বী তো বটেই, হাইব্রিড গাড়ি বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটি ছাড়িয়ে গেছে ইলেক্ট্রনিক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টেসলাকেও। 

টয়োটার গাড়ি গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে- ১ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজারটি। এর এক-তৃতীয়াংশই ছিল হাইব্রিড। ইভি বিক্রি হয়েছে ১ শতাংশেরও কম। 

পেট্রল চালিত গাড়ির চেয়ে কম পরিবেশ দূষণ করলেও, ইলেকট্রিক গাড়ির  তুলনায় তা অনেক বেশি। 

লবিং কাণ্ড

সম্প্রতি টয়োটা সিএনএনকে জানিয়েছে- যত দ্রুত সম্ভব, কার্বন নিরসন তারা সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু বাগড়া দিচ্ছে নাকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাবিত ইভি নীতি বাস্তবায়িত হলে আগামী দশক থেকে নতুন গাড়ি বিক্রয়ের দুই-তৃতীয়াংশ হতে হবে ইভি ওরফে ব্যাটারি চালিত গাড়ি।

বাইডেন প্রশাসনের এই নীতি নিয়ে মহা সোচ্চার টয়োটা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্বব্যাপী টয়োটার লবিং দৌরাত্ম্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের প্রসার হয়ে আছে স্থবির। তাদের মতে, টয়োটার এসব কর্মকাণ্ড বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বড় প্রভাব ফেলবে।

বিশ্বব্যাপী কার্বন দুষণের প্রায় ২৫ শতাংশের জন্য সড়ক পরিবহন দায়ী। ফলে যানবাহন শিল্পের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে টয়োটা যা-ই করবে, তার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অনুসরণ করবে তাকেই। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন কৌশল টয়োটাকে স্বল্পমেয়াদে উপকৃত করলেও, দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধের যাবতীয় কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করবে। 

পরিবেশগত প্রভাব

তেলচালিত, হাইব্রিড কিংবা ইভি- সব ধরনের গাড়ি নির্মাণের সময় প্রায় সমপরিমাণ পরিবেশ দূষণ হয়।

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণেও আছে পরিবেশগত ঝুঁকি। শতভাগ বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর জন্য প্রয়োজন হয় বিশাল আকারের ব্যাটারি। আর এসব ব্যাটারি তৈরির উপাদানগুলো তোলা হয় খনির গভীর থেকে। 

গবেষণা বলছে, এই খনিজগুলো আহরণের সময় যে দূষণ হয়, তার পরিমাণ হাইব্রিড এবং তেলচালিত যানের তুলনায় গড়ে ৪০ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে গ্যাস-চালিত গাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু তাতে কী?

গাড়ির পুরো জীবদ্দশায় এদের ধোঁয়ায় চলে ভয়াবহ দূষণ। 

বিশেষজ্ঞদের মতে সড়কে নামার পর, গোটা জীবদ্দশায় পরিবেশের সবচেয়ে কম দূষণ ঘটায় ইভি, তারপর হাইব্রিড এবং সবশেষে গ্যাস বা তেলচালিত গাড়ি।

ইভির ভবিষৎ, টয়োটা এবং জলবায়ু ইস্যু

টয়োটার চেয়ারম্যান আকিও টয়োডা একবার বলেছিলেন যে, সারাবিশ্বে ৩০ শতাংশের বেশি গাড়ি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক হয়ে যাবে তিনি এমন মনেই করেন না। আর তার কোম্পানির পরিকল্পনাতেও এই কথার সমর্থন দেখা যায়। টয়োটার মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে তারা  ৩৫ লাখ ইভি নির্মাণ করতে চায়, যা তার বর্তমান গাড়ি বিক্রয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অথচ তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেকেরই পরিকল্পনা ভিন্ন। এই একই সময়ের মধ্যে শতভাগ ইলেক্ট্রনিক যান নির্মাণের পরিকল্পনা করছে টয়োটার প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রতিষ্ঠান।   

ইলেক্ট্রনিক গাড়ি নিয়ে টয়োটার এ অবস্থানের ব্যাপারে দ্বিমত করছে টয়োটার কিছু শেয়ারহোল্ডার। ডেনিশ পেনশন ফান্ড ‘অ্যাকাডেমিকারপেনশন এমনই একটি শেয়ার হোল্ডার প্রতিষ্ঠান। তারা ইভির বিপক্ষে টয়োটার লবিং-কে ‘নেতিবাচক’ বলছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ইস্যুতে তারা টয়োটাকে নেতিবাচক ভূমিকায় দেখতে আগ্রহী নয়।

সামগ্রিকভাবে, হাইব্রিড গাড়ি কেন্দ্রিক টয়োটার এই বিক্রয় কৌশল একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। 

টয়োটার নীতি নিয়ে অবশ্য ভিন্ন মত-ও আছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার সিভিল অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক ড্যানিয়েল স্পার্লিং বলেন, “আসলে টয়োটা বেশ সাবধানী একটি প্রতিষ্ঠান। লক্ষ্য করলে দেখবেন তাদের পলিসি হলো আরও বেশি করে প্লাগ-ইন হাইব্রিড প্রযুক্তির দিকে আগানো। তাদের দিক থেকে এটাই অগ্রসর পদক্ষেপ। ক্রেতামহলে কিংবা বাজারে এটি কোনভাবেই সমস্যা তৈরি করবেনা। তারা চলে ধীরে। সামগ্রিকভাবে তাদের বৈশিষ্ট্যই এমন। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।”

সিএনএন অবলম্বনে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত